এস, এম শাফায়েত: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। সবচেয়ে বড় উৎসবের প্রস্তুতিটাও বেশ বড়সড়। উৎসবের দিনে একটি নতুন, চকচকে সুন্দর পোশাক সকলেরই কাম্য। ঈদুল ফিতরের দিনে নিজেকে সাজানোর ব্যস্ততা এখন সকলের মাঝে। কাপড় কেনার জন্য নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সীরা ছুটছেন মার্কেট ও বিপণী বিতান গুলোর দিকে। এবার ক্রেতাদেরকে একটু আগে থেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে মার্কেট ও বিপনীবিতান গুলোতে। তবে শেষ রোজার দিকে আরেকবার ভিড় জমবে বলে দোকানীরা আশাবাদী। এর কারণ হিসাবে অনেক ক্রেতা জানায়, ঈদের কেনাকাটা তো কম-বেশি করতেই হবে। তাই প্রথমেই দেখেশুনে কেনার সময় বেশ ভালো পাওয়া যায়। তাই একটু আগে থেকেই সচেতন ক্রেতারা কেনাকাটা শুরু করেছেন। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রতিটি মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোতে দেখা গেছে ঈদের বাড়তি আমেজ। তুলনামূলক সব দোকানেই ক্রেতা সমাগম লক্ষ্য করা গেছে।
এবার ঈদেও বিভিন্ন মেগা সিরিয়ালে নায়িকাদের পরিহিত পোশাকের নামের পোশাকগুলো দোকানে শোভা পেয়েছে। তবে চাহিদার তালিকায় তরুণীরা এবার নিজের পছন্দে পোশাক কিনতে স্বচ্ছন্দবোধ করছে। তবে কেউ কেউ বাহুবলী, বাহুবলী-২, ধূম, পাখি জামা, আবার কিরণমালার জামাসহ অন্য নায়িকাদের পরিহিত জামাও ক্রয় করছে বলে বিভিন্ন দোকানীরা জানান। এদিকে ছেলেদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে শোভা পাচ্ছে দেশী-বিদেশী পাঞ্জামী-পাজামা। চাহিদানুসারে বিভিন্ন নামে পাঞ্জামীর ডিসপ্লে সাজানো হয়েছে জেন্টস গার্মেন্টস গুলোতে।
মার্কেটের বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি থ্রি পিস কেনার জন্যও মেয়েদের উপচেপড়া ভিড়। তবে গতবারের চেয়ে এবার প্রথমদিকেই প্রতিটি কাপড়ের দোকানে ক্রেতা সমাগম লক্ষ্যণীয়। এছাড়া শাড়ির দোকানগুলোতেও রয়েছে সমান ভিড়। শাড়ি ও তার সাথে ম্যাচ করে অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার জন্যও ব্যস্ততা দেখা গেছে।
প্যান্ট ও শার্ট পিস থেকে শুরু করে থ্রি-পিস, শাড়ি এবং তৈরি পোশাকের প্রতিটির মূল্য গতবারের চেয়ে এবার হাতের নাগালে আছে বলে অনেক অভিভাবকরা জানান। প্রতিটি ম্যার্কেট ও কসমেটিক্স বিপণী বিতানগুলোতে প্রচ- ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও বেশি দামের জন্য পছন্দের জিনিস অনেকেই নিতে পারছে না। সমবায় নিউ মার্কেট, প্রিন্স প্লাজাসহ শহরের বিভিন্ন মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, এবারও মার্কেটগুলোতে দেশী-বিদেশি কাপড়ে সয়লাব। ভারত, পাকিস্তানি, চীন, জাপান, কোরিয়ার প্যান্ট ও শার্ট পিস এবং ভারতীয় থ্রি-পিসে বাজার ভরে গেছে। দোকানিরা বলছে এগুলো বৈধভাবে আমদানী করা হয়েছে।
ঈদ বাজার করতে আসা বেশ কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা জানায়, প্রতি বছরের তুলনায় এবার একটু আগেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছি। কারণ শেষ সময়ের দিকে তেমন একটা ভালো জিনিস পাওয়া যায় না। তাই আগেই পরিবারের পছন্দমতো কেনাকাটা করে রাখার জন্য মার্কেটে এসেছি। এবার থ্রি-পিসসহ ছেলেদের প্যান্ট ও শার্টের দাম খুবই চড়া। তাই কাপড় কিনে বানাতে দিয়েছেন। তবে মজুরি একটু বেশি।
বড় বাজার সমবায় নিউ মার্কেটের নন্দন’র স্বত্ত্বাধিকারী সুমন পারভেজ জানান, এবছর শুরুর দিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্রেতাদের ভিড় একটু হলেও লক্ষ করা যায়। তবে ২০ রমজানের পর আরেকবার কেনাকাটায় ব্যস্ততা থাকবে ক্রেতাদের মাঝে। আশা রাখি এবার ঈদের পুরো মৌসুমে ক্রেতাদের ভিড়ে ঈদ বাজারের কেনাকাটা জমে উঠবে। এতে করে ব্যবসায়ীরা অন্য বছরের তুলনায় এবার লাভের মুখ একটু হলেও বেশি দেখবেন বলে আমি আশাবাদী।
পোশাকের দাম নিয়ে সুমন পারভেজ বলেন, দেশী-বিদেশী পোশাক আমদানীতে ক্রেতাদের পছন্দ মত কিনতে সুবিধা হচ্ছে। ছেলেদের জন্য এবার থাই জিন্স ২৮৫০ থেকে ৩৪৫০, ইন্ডিয়ান জিন্স ২৪৫০ থেকে ৩৫৫০ সহ বিভিন্ন মূল্যের চায়না জিন্স, টার্কিজ জিন্স প্যান্ট আমদানী করা হয়েছে। সাথে সাথে থাই ও ইন্ডিয়ান ডিজাইনের ফুল স্লিপ সার্টসহ দেশী ডিজাইনের সার্ট রয়েছে। তবে এবার ছেলেরা পাঞ্জামীর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হওয়ায় আমদানী করা হয়েছে পাকিস্থানী তুস কাপড়ের পাঞ্জামী মূল্য ৪৮০০ থেকে ৫২০০, ইন্ডিয়ান পাঞ্জামী ২২০০ থেকে ২৪০০, জামালপুরের পাঞ্জামী ১০৫০ থেকে ১৮৫০ সহ বাহুবলী, কাটাপ্পা ব্রান্ডের পাঞ্জামী, আলীগড় পাজামা।
এ মার্কেটের সাজঘর’র কৌশিক জানান, প্রতি বছরের তুলনায় এ বছরও জমে উঠেছে ঈদের বাজার। এবার মেয়েরা কোনো সিরিয়ালের নায়িকার নামের সাথে মিল রেখে পোশাক কিনছে না। সবাই নিজের পছন্দ মত পোশাক কিনতে ব্যস্ত। তবে দেশী-বিদেশী গাউন, থ্রি-পিস ও লেহেঙ্গা বেশি কিনছে মেয়েরা। ইন্ডিয়ান পোশাকের মধ্যে মাহেশমতি, বাহুবলী-২ অনেকে পছন্দ করছেন। পোশাকের দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় পছন্দ মত পোশাক কিনতে পারছে সকলেই।
চুয়াডাঙ্গায় ঈদকে সামনে রেখে দম ফেলার ফুরসত নেই দর্জিবাড়ির কারিগরদের
আর তাদের পছন্দসই একটি পোশাকের জন্য দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জিবাড়ির কারিগররা। ঈদ আসতে আড়াই সপ্তাহ বাকী। শহরের দর্জিপাড়াগুলো জমে উঠেছে কাপড় কাটা, সেলাই করা এবং ট্রায়াল দেয়ার কাজে। দর্জিরা কেউ ব্যস্ত দোকানে আসা কাস্টমারদের কাপড়ের অর্ডার নিতে, আবার কেউ ব্যস্ত কাস্টমারদের কাপড়ের মাপ বুঝে নিতে। কাস্টমারদের মনের মতো সুন্দর পোশাক বানাতে এমনিভাবে দর্জিরা সবাই ব্যস্ত থাকবেন চাঁদরাত পর্যন্ত।
পাশাপাশি আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে দর্জিপাড়ার কারিগররা। অনেকেই আবার ঈদের কেনাকাটার ভিড় জমার আগেই দর্জির দোকানগুলোতে পছন্দমতো কাপড় কিনে তৈরি করতে দিচ্ছেন বিভিন্ন পোশাক। রাতভর সেলাই মেশিনের শব্দে সরগরম থাকছে টেইলার্স গুলোতে। কিছু কিছু টেইলার্সের দোকানে সাইনবোর্ড ঝুলছে ‘ঈদের অর্ডার নেওয়া বন্ধ’ আবার ‘ঈদের শেষ ১০দিন কোনো অর্ডার নেয়া হবে না’। ছোট থেকে শুরু করে ভিআইপি দোকানের কারিগররা এখন দিনরাত ব্যস্ত। অপরদিকে সুযোগ হাতে পেয়ে দর্জিপাড়ার লোকেরা সময় নেই এবং কাজের অনেক ভিড় বলে দ্বিগুণ পারিশ্রমিকেও অর্ডার নিতে বাধ্য হচ্ছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ের……….. টেইলার্সের মালিক জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরে ধানের দাম না থাকায় কৃষি প্রধান এই এলাকায় কৃষকরা নায্যমূল্যে ধান বিক্রয় করতে না পারায় অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে কেনাকাটা করতে পারছে না বলে চাপটা অনেকটাই কম। তবুও এবার শেষ সময়ের আগেই কাজের চাপ অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি। লোকজনেরা শেষ সময়ে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাই কারখানায় কর্মরত কারিগরদের সারা রাতভর কাজ করতে হয় বলে তাদের মজুরিও একটু বেশি দিতে হয় বলে মজুরিটা কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে।
কারিগর…………বলেন, প্রচলিত ধারার সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি মেয়েরা এবার ফ্লোর টাচ বা গাউন বেশি বানাচ্ছে। গত দুই ঈদ থেকে গাউন বেশি চলছে। আমার টেইলার্সে এবার গাউনের অর্ডার বেশি। এবারে এটাই হাল ফ্যাশান হিসেবে চলবে। পোশাকের অর্ডারের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা ১৫ রোজার পর আর অর্ডার নেবোনা। তবে খুব ইমারজেন্সি হলে সে ক্ষেত্রে মজুরী বেশি পড়বে। আরেক দর্জি বলেন, এবারে গাউনটা বেশি চলছে। কিশোরী ও তরুনীরা গাউন বেশি বানাচ্ছে। আর সালোয়ার কামিজের অর্ডারতো আমরা সারাবছরই পাই। পাশাপাশি সালোয়ার কামিজও সেলাই করছি। সে সঙ্গে চলছে লং কামিজ ও লেহেঙ্গা।