আলোকিত ডেক্স: ঢাকার মিরপুরে প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে ঘিরে রাখা বাড়ির সন্দেহভাজন জঙ্গি আবদুল্লাহ আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
তিনি বলেন,“সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে সে আত্মসমর্পণ করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। এর মধ্যে ধ্বংসাত্মক কিছু করতে চাইলে আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”
তবে রাত ৯টা পর্যন্ত ওই বাড়ি থেকে কেউ আত্মসমর্পণ করেনি। র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, এশার নামাজ পড়ে আত্মসমর্পণের বিষয়ে জানাতে চেয়েছেন ওই জঙ্গি।
র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহ একজন ‘দুর্ধর্ষ জঙ্গি’, যে ২০০৫ সাল থেকে সে জঙ্গিবাদে জড়িত। মিরপুর মাজার রোডের দীর্ঘদিনের এই বাসিন্দা ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামতের কাজে জড়িত।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট সাতজন ওই ভবনের পঞ্চম তলায় অবস্থান নিয়ে আছে।
“সে র্যাবকে বলেছে, তার কক্ষে ৫০টির মত আইইডি আছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ রয়েছে। গত রাতে অভিযান শুরুর পর ওইদিক থেকে গুলি করা হয়েছিল। তার কাছে একটি পিস্তলও থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।”
মুফতি মাহমুদ খান বিকালে বলেছিলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন তারা। যতবারই ফোনে তার সঙ্গে র্যাব যোগাযোগ করেছে, ততবারই সে ভাবার জন্য সময় নিয়েছে।সময় নেওয়ার ছলে আবদুল্লাহ অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে পরামর্শ করছে কি না, সে প্রশ্ন তখন এড়িয়ে যান র্যাবের গণমাধ্যম পরিচালক
সন্ধ্যায় আবদুল্লাহর রাজি হওয়ার খবর জানাতে এসে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল কোনো ক্যাজুয়ালটি যাতে না হয়। আমরা আত্মীয়দের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাকে রাজি করাতে চেয়েছি।কিছুক্ষণ আগে সে রাজি হওয়ার সংকেত দিয়েছে।”
কীভাবে এই সংকেত পাওয়া গেল- তা জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আবদুল্লাহ আত্মসমর্পণে রাজি থাকলে তার এক স্ত্রী ও এক সন্তান বারান্দায় এসে হাত নেড়ে কথা বলবে। সন্ধ্যার দিকে ঠিক তাই তারা করেছে।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার রাতে এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবির জঙ্গি’ দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্র আটক করার পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে ঢাকায় র্যাবের এই অভিযান শুরু হয়।
দারুস সালাম থানা এলাকায় মাজার রোডের পাশে বর্ধনবাড়ি ভাঙ্গা ওয়ালের গলির ২/৩-বি হোল্ডিংয়ে ছয় তলা ওই বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেও পরিবার নিয়ে ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন।
মুফতি মাহমুদ খান জানান, র্যাব ওই বাড়ি ঘিরে ফেলার পর রাত ১টার দিকে সেখান থেকে চারটি বোমা ছোড়া হয়। ওই বোমার মধ্যে পেট্রোল বোমাও ছিল। ফলে বাইরে পড়ার পর সেখানে আগুন ধরে যায়। ওই বাড়ি থেকে র্যাবের দিকে গুলিও ছোড়া হয়।
রাতে ওই বিস্ফোরণের পর ফায়ার ব্রিগেডের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ওই বাড়ির সামনের অংশে পানি ছিটানো হয়।
ওই ৬৫ জনের মধ্যে আবদুল্লাহর এক বোনও আছেন জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় সে বলেছে, যেন অন্যদের সঙ্গে তার বোনকেও সরিয়ে নেওয়া হয়।”
‘জঙ্গিদের’ আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পুরো এলাকা র্যাব ঘিরে রাখায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সময় দিন কাটে একপ্রকার বন্দি অবস্থায় উৎকণ্ঠার মধ্যে।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থলে এসে পুরো পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর দুপুরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি তখন বলেন, “আমরা আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণ করতে বলেছি। সে সময় চেয়েছে। যেহেতু ভেতরে দুটি বাচ্চা রয়েছে, আমরা তাকে সময় দেব। চূড়ান্ত অভিযানের জন্য আমরা প্রস্তুত। এখন তার সিদ্ধান্তের ওপরই সব কিছু নির্ভর করছে।”
এর আগে গত ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের সকালে ঢাকার পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যদের অভিযানের মধ্যে নব্য জেএমবির সন্দেহভাজন এক জঙ্গি সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়।
সাইফুল ইসলাম নামের ওই জঙ্গি জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে হামলার পরিকল্পনায় ছিলেন বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সে সময় জানিয়েছিলেন।